মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে এবং শিক্ষকদের ওপর পুলিশের সাম্প্রতিক হামলার প্রতিবাদে সারাদেশের সব বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। ফলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকাল থেকেই ক্লাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে ফিরে গেছে। অনেক শিক্ষক নিয়মমতো প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হলেও ক্লাস ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন। অন্যদিকে, ঢাকায় অবস্থানরত শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তারা জানিয়েছেন, তাদের দাবির বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।
একটি কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক জানান, “আমরা সকাল ৯টার দিকে কলেজে উপস্থিত হয়েছি, কিন্তু পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো ক্লাস বা প্রশাসনিক কাজে অংশ নিইনি। আমাদের সবাইকে সকাল ১০টার পর শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তিন দফা দাবি ও প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষা
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “গতকাল প্রেসক্লাবের সামনে আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের ন্যাক্কারজনক হামলা আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি। এতে আমাদের পাঁচজন সহকর্মী আহত হয়েছেন। শিক্ষক সমাজের ওপর এভাবে হামলা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা সরকারের কাছ থেকে ন্যায়বিচার ও দায়ীদের শাস্তি দাবি করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বারবার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি যে, বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশ নির্ধারণ, পুলিশি হামলার ঘটনার বিচার এবং আমাদের দাবিগুলো মেনে প্রজ্ঞাপন জারি করা হোক। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার থেকে প্রজ্ঞাপন না আসে, আমাদের আন্দোলন ও কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।”
শিক্ষকদের ক্ষোভ ও হতাশা
রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তারা সকাল থেকেই ক্লাস নিচ্ছেন না। অনেক প্রতিষ্ঠানের গেটে শিক্ষকরা ব্যানার হাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি থাকলেও ক্লাসরুম খালি পড়ে আছে।
চট্টগ্রামের এক শিক্ষক বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু এখনো সরকার সে বিষয়ে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি। এরই মধ্যে আবার আমাদের সহকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে— যা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা বাধ্য হয়েই কর্মবিরতিতে নেমেছি।”
আগের দিনেই ঘোষণা দিয়েছিল শিক্ষক সংগঠন
এর আগে রোববার (১২ অক্টোবর) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের পক্ষ থেকে সোমবার থেকে সারাদেশে কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। সেদিন অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “প্রেসক্লাবের সামনে আমাদের শিক্ষক সহকর্মীদের ওপর যে ন্যাক্কারজনক হামলা হয়েছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। এর প্রতিবাদে সোমবার থেকে দেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের দাবি শুধু বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধি নয়— আমরা চাই শিক্ষক সমাজের মর্যাদা রক্ষা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হোক। সরকার যদি আন্তরিক হয়, তাহলে সহজেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।”
শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি
কর্মবিরতির কারণে রাজধানীসহ সারাদেশের হাজারো স্কুল–কলেজে ক্লাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তায় পড়েছে। পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসায় অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের সামনে টেস্ট পরীক্ষা, কিন্তু ক্লাস বন্ধ থাকায় প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।”
অন্যদিকে, শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষকরা যদি শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি তুলে ধরেন, তাহলে আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব। তবে তারা আশা প্রকাশ করেছেন যে, আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এই অচলাবস্থা কেটে যাবে।
