গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহের সময় ঘাম হওয়া এবং শরীরের অস্বস্তি অনুভব করা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে কখন তা সাধারণ গরম লাগা থেকে হিট স্ট্রোকে পরিণত হতে পারে, তা বুঝে ওঠা অনেক সময় কঠিন। তাই হিট স্ট্রোকের উপসর্গগুলো জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আপনি বা অন্যরা সময়মতো সাহায্য পেতে পারেন।
হিট স্ট্রোক কেন হয়?
শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণে হিট স্ট্রোক হতে পারে। যখন শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না, তখন তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে হিট স্ট্রোক হতে পারে। বিশেষ করে যখন দীর্ঘ সময় ধরে গরম এবং আর্দ্র পরিবেশে থাকেন বা ঘামের মাধ্যমে শরীরের তাপ বের হতে না পারে। এই ধরনের হিট স্ট্রোককে ক্ল্যাসিক হিট স্ট্রোক বলা হয়। আবার যারা রোদের তাপে বাইরে কাজ করেন বা দীর্ঘসময় রোদে চলাচল করেন, তারা এক্সারশনাল হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন। সাধারণত এই ধরনের হিট স্ট্রোক তখন ঘটে যখন কেউ উচ্চ তাপমাত্রার সাথে অভ্যস্ত না থাকে। কিছু প্রধান কারণের মধ্যে রয়েছে:
- শরীরের পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন): পর্যাপ্ত পানি না পেলে ঘাম উৎপন্ন হয় কম, ফলে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে।
- দীর্ঘসময় শারীরিক পরিশ্রম: গরমে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা কায়িক কাজ, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর ট্রেনিংয়ের সময়, হিট স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
- বয়স এবং স্বাস্থ্য সমস্যা: শিশু, বৃদ্ধ এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা স্থূলতা আক্রান্ত ব্যক্তিদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি।
- কিছু ওষুধ: কিছু ঔষধ শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণে বাধা দিতে পারে, তাই গরমে কাজ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
- অতিরিক্ত গরম পোশাক বা বদ্ধ পরিবেশ: অতিরিক্ত মোটা কাপড় পরা বা বদ্ধ স্থানে দীর্ঘ সময় থাকা শরীরের তাপ বাড়িয়ে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ হিট স্ট্রোকের কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:
- শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ফারেনহাইট (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশি হয়ে যাওয়া। ত্বক গরম, শুষ্ক ও লাল হয়ে যাওয়া, ঘাম কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানো।
- তীব্র মাথাব্যথা, বিশেষ করে মাইগ্রেনের মতো।
- বিভ্রান্তি বা অসংলগ্ন কথা বলা, যেমন সময় বা স্থান ভুলে যাওয়া।
- খিচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
- হ্যালুসিনেশন বা প্রলাপ বকা।
- হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যাওয়া, দ্রুত ও দুর্বল পালস।
- রক্তচাপ কমে যাওয়া।
- পেশীতে ব্যথা বা খিঁচুনি।
- বমি বা ডায়রিয়া, কখনও কখনও রক্তপাতসহ।
- শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত ও অগভীর হয়ে যাওয়া।
- চোখে ঝাপসা দেখা বা পেশী দুর্বলতা অনুভব করা।
হিট স্ট্রোক হলে করণীয়-
হিট স্ট্রোক একটি মারাত্মক অবস্থায় পরিণত হতে পারে, তাই লক্ষণগুলো দেখলেই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমে রোগীকে গরম পরিবেশ থেকে সরিয়ে তুলনামূলক শীতল কোনো স্থানে নিন। আপনি যদি নিজেই লক্ষণগুলো অনুভব করেন, তবে দ্রুত শীতল স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করুন এবং সাহায্য নিন।
পোশাকটি ঢিলা করে দিন, বিশেষত গলার টাই, চাপা জামা বা বেল্ট খুলে ফেলুন। রোগীর আশেপাশে কাউকে বেশি ভিড় করতে দিবেন না, যাতে বাতাস চলাচল অব্যাহত থাকে। ভেজা টাওয়েল ঘাড়, মাথা এবং বগলে চাপ দিয়ে ধরুন। সম্ভব হলে মুখ এবং মাথা ধুয়ে ফেলুন।
এই প্রথমিক চিকিৎসা চালিয়ে যেতে থাকুন এবং যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করুন। কারণ সাময়িকভাবে এই পদক্ষেপগুলি সাহায্য করতে পারে, তবে শরীরের ভেতরে কোনো ক্ষতি হয়ে থাকলে তা চিকিৎসকেই নির্ণয় করতে হবে। সুস্থ থাকতে হলে সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং দ্রুত চিকিৎসা নিন।