বিজ্ঞাপন স্থান

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে

 নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বৃত্তি পরীক্ষা চালু রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ আর্থিকভাবে পিছিয়ে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া বৃত্তি তাঁদের জন্য এক ধরনের প্রণোদনা হয়ে উঠতে পারে, যা ভবিষ্যতের শিক্ষাপথে তাদের টিকে থাকতে সহায়তা করবে।


বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করেছে, সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মানোন্নয়নে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে শুধু সরকারি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি পরীক্ষা চালু রাখা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই বৈষম্যমূলক নয়, কারণ সরকারি বিদ্যালয় সব শ্রেণির শিশুর জন্য উন্মুক্ত এবং রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত।
এছাড়া, কিন্ডারগার্টেনগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ‘কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন বৃত্তি পরীক্ষা’ পরিচালনা করে থাকে, যেখানে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারে না। সুতরাং সরকারি স্কুলের অভিভাবকদের বৃত্তি পরীক্ষা চালুর দাবি অযৌক্তিক নয়।
২০০৯ সালের আগে পৃথকভাবে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হতো। পরে সেটি বাতিল করে চালু হয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা, যেখানে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারত। কিন্তু পিইসি ঘিরে তৈরি হয় অসুস্থ প্রতিযোগিতা, কোচিং নির্ভরতা ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। এ কারণে করোনা ও নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় পিইসি পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর ২০২২ সালে হঠাৎ করে বৃত্তি পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়, যার ফল প্রকাশে বিভ্রাট দেখা দেয়। ২০২৩ সালে পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আবারও বৃত্তি পরীক্ষা চালুর ঘোষণা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ
ভবিষ্যৎ পথে কোনটি সঠিক?
‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বৃত্তি পরীক্ষা’ বিষয়টি নিঃসন্দেহে দুই মেরুর মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে—একদিকে অর্থনৈতিক সহায়তা ও মেধা চর্চার সুযোগ, অন্যদিকে শিশুদের মানসিক চাপ ও বৈষম্যের সম্ভাবনা
সরকার যদি এই পরীক্ষা চালিয়েও কোচিং ব্যবসা, চাপ সৃষ্টিকারী অভিভাবক প্রবণতা, এবং প্রশ্ন ফাঁসের মতো অব্যবস্থাপনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারে, তাহলে এটি শুধু উদ্দেশ্যহীন নয়, বরং ক্ষতিকরও হতে পারে।
অতএব, পরীক্ষার কাঠামো, মূল্যায়ন পদ্ধতি, ফল ব্যবস্থাপনা, এবং মানসিক চাপমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে একটি ভারসাম্য খুঁজে বের করাই হবে সবচেয়ে জরুরি কাজ।