বিজ্ঞাপন স্থান

কোরআন হাদিসের আলোকে যে কারনে রোজা ভঙ্গ বা মাকরুহ হয়।

রোজা মুসলমানদের জন্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে রোজা তৃতীয়। একজন মুসলিমের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি বিশেষ নেয়ামত কেননা এই রোজার পুরস্কার আল্লাহ নিজেই দিবেন. তাই পবিত্র রমজান মাসে প্রায় তাই সুবহি সাদিক থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত যাবতীয় সকল পানাহার এবং রোজা ভঙ্গের অন্যান্য কারণ থেকে মুক্ত থেকে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে প্রতিটি রোজার বিধান প্রাপ্ত মুসলিমই মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্যে রোজা পালন করে থাকে। 



অন্যদিকে যার উপর রোজার বিধান ফরজ করা হয়েছে সে ব্যক্তি যদি কারণ ছাড়া রোজা ভঙ্গ করে তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তার জন্য কেয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি রেখেছেন.সুতরাং প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও সবল মুমিনের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো কি কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় । বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ, রোজা ভঙ্গের  কারণগুলি না জানার কারণে অনেক সময় সেই কাজগুলো করে থাকি যার ফলে আমাদের অজান্তেই রোজা ভঙ্গ কিংবা মাকরুহ হয়ে থাকে । তাই আসুন জেনে নেই কি কি কারণে রোজা রাখো কিংবা ভঙ্গ হয় । 

রোজা ভঙ্গের কারণঃ 

ইসলামি শরিয়ামতে, সিয়ামের শুদ্ধতা ও যথার্থতার জন্য নির্ধারিত কিছু বিধিবিধান রয়েছে, যার ব্যতিক্রম ঘটলে রোজা ভঙ্গ হয়, অন্যথায় মাকরুহ হয়ে যায়। শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই রোজা নয়;বরং রোজা রাখা অবস্থায় মেনে চলতে হয় বেশ কিছু নিয়মকানুন। রোজা ভঙ্গের কারণগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
  • শরীরে কিছু প্রবেশের মাধ্যমে।
  • শরীর থেকে কিছু নির্গত হওয়ার মাধ্যমে।
১। শরীরে কিছু প্রবেশের মাধ্যমেঃ রোজা ভঙ্গের অন্যতম কারণ হলো যে কিছু প্রবেশ করানো,অর্থাৎ সিয়াম অবস্থায় কোন ব্যক্তি যদি খাবার, পানীয় ইত্যাদি আহার করে তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। অর্থাৎ রোজা অবস্থায় কোনভাবেই কোন খাবার খাওয়া যাবেনা । কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন খাবার গ্রহণ করে তাহলে রোজার মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে না।

اُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ اِلٰى نِسَاۤىِٕكُمْ ۗ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَاَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ۗ عَلِمَ اللّٰهُ اَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُوْنَ اَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ ۚ فَالْـٰٔنَ بَاشِرُوْهُنَّ وَابْتَغُوْا مَا كَتَبَ اللّٰهُ لَكُمْ ۗ وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتّٰى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْاَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْاَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِۖ ثُمَّ اَتِمُّوا الصِّيَامَ اِلَى الَّيْلِۚ وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَاَنْتُمْ عَاكِفُوْنَۙ فِى الْمَسٰجِدِ ۗ تِلْكَ حُدُوْدُ اللّٰهِ فَلَا تَقْرَبُوْهَاۗ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللّٰهُ اٰيٰتِهٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ  ( البقرة: ١٨٧ )



“সুতরাং (রমযানের রাতে) তোমরা তাদের (তোমাদের স্ত্রীদের) সাথে মিলন কর, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন তার খোঁজ কর, আর খাও ও পান কর যতক্ষণ পর্যন্ত না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত (যার প্রারম্ভ সূর্য) পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর।” [আল-বাকারাহ: ১৮৭]
তবে কোন ব্যক্তি যদি ভুলক্রমে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন খাবার খেয়ে ফেলে অথবা খাবার খাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল সে রোজাদার ,এমতাবস্থায় অবশিষ্ট খাবার পরিহার করে রোজার বাকি সময়টুকু পানাহার বর্জন করলে তার রোজা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। 
এ বিষয়ে নবী করিম (সা.) বলেছেন- ‘যদি কেউ ভুলক্রমে পানাহার করে তবে সে যেন তার সিয়াম পূর্ণ করে নেয়, কেননা, আল্লাহ তায়ালাই তাকে এ পানাহার করিয়েছেন।’ (বোখারিও মুসলিম শরিফ

২। শরীর থেকে কিছু নির্গত হওয়ার মাধ্যমেঃ শরীরে কিছু প্রবেশ করার মাধ্যমে যেমন রোজা ভঙ্গ হয় তেমনি শরীর থেকে  ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু নির্গত হলেও রোজা ভঙ্গ হয় . যেমন- সহবাস, ইচ্ছাকৃত বমি করা, হায়েয ও শিঙ্গা লাগানো ইত্যাদি। কেননা এসব নির্গত হওয়ার মাধ্যমে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এজন্য আল্লাহ সুবহানাতায়ালা এগুলোকে রোযা ভঙ্গকারী বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি কারো বমি হয় কিংবা শরীর থেকে কিছু নির্গত হয় সে ক্ষেত্রে রোজা ভঙ্গ হবে না অর্থাৎ এমন সব শারীরিক অবস্থা যেটাতে মানুষের কোন হাত থাকে না ।

রোজা ভঙ্গের আরো কিছু কারণ কারণ:

  • ১. মেয়েদের মাসিক ও সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব হলে।
  • ২. রোজা থাকা অবস্থায় ইসলাম ত্যাগ করলে।
  • ৩. শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা খাবার স্যালাইন সেলাইন দিলে।
  • ৪. ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করালে।
  • ৫. ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে।
  • ৬. ভুলবশত কোনো কিছু খেয়ে, রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছা করে খাবার খেলে।
  • ৭. বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা খেয়ে ফেললে।
  • ৮. নাক  বা কান দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করালে।
  • ৯. দাঁতের ফাঁক  কোন খাবার বা কোন খাবারের অংশ জিহ্বা দিয়ে টেনে বের করে সেটা খেয়ে ফেললে।
  • ১০. অল্প বমি মুখে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেললে।

কি কারনে রোজা মাকরূহ হয়ঃ

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক কি কি কারণে আমাদের রোজা মাপ করে দিতে পারে। সিয়াম  বা রোজা থাকা অবস্থায় নিম্ন বর্ণিত যে কোন কাজ করলে সিয়াম মাকরূহ হয়ে যায় :
(১) অযুর সময় গড়গড়া করে কুলি করা, জোড় দিয়ে নাকে পানি টানা। এতে গলা বা নাক দিয়ে ভিতরে পানি প্রবেশ করার সম্ভাবনা থেকে যায়।
(২) বিনা প্রয়োজনে খাদ্যের স্বাদ দেখা। তবে প্রয়োজন হলে দেখতে পারে। এখানে একটি কথা আছে খাদ্যের স্বাদ এমন ভাবে নিতে হবে যেন সেটা কি ক্ষুধা নিবারণ না করে। খাদ্যের স্বাদ নেওয়ার বিভিন্ন কারণ আছে যেমন কোন পুরুষ যদি খাবারের বিস্বাদে স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ কিংবা প্রহার করার মত কাজ করে তখন সে ক্ষেত্রে স্ত্রী  রান্না করার সময় খাবারের স্বাদ নিতে পারবে তবে সেটা পরিমাণে স্বাদ নেওয়া পর্যন্তই।
(৩) থুথু কফ মুখে জমিয়ে গিলে ফেলা। অল্প অল্প থুথু গিলে ফেললে কোন অসুবিধা নেই। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা মুখের মধ্যে থুতু জমিয়ে রাখেন এটা একেবারেই উচিত নয় সে তো আসার সাথে সাথে সেটা ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
(৪) যৌন অনুভূতি নিয়ে স্ত্রীকে চুম্বন ও আলিঙ্গন করা, বারবার তার দিকে তাকানো, বারবার সহবাসের কল্পনা করা। কারণ অনেক সময় অধিক উত্তেজনায় বীর্যপাত ঘটে বা সহবাসে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। 

রোজা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নঃ

প্রশ্নঃ। চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ, দাঁত তোলা, ক্ষতস্থান ড্রেসিং করলে কি রোজা ভঙ্গ হবে?
উঃ- না। চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ, দাঁত তোলা, ক্ষতস্থান ড্রেসিং করলে কি রোজা ভঙ্গ হবেনা।

প্রশ্নঃ। এজমা (শ্বাসকষ্ট) চিকিৎসায় যে ঔষধ জাতীয় ট্যাবলেট বা এ জাতীয় বস্তু জিভের নিচে রাখলে রোজা ভঙ্গ হবে?
উঃ- না। যদি না সেগুলো গিলে ফেলে।

প্রশ্নঃ শরীরের  প্রসাধনি ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে?
উঃ- না এতে রোজা ভঙ্গ হবে না তবে প্রসাধনি যদি শরীরে প্রবেশ করে অর্থাৎ খাদ্যনালীতে চলে যায় তবে রোজা ভঙ্গ হবে। স্বাভাবিকভাবে মাথায় তেল মুখি শুন্য কিংবা শরীরে শুষ্কতার জন্য ব্যবহার করতে পারেন মনে রাখতে হবে এসব প্রসাধনি যেন অতিরিক্ত সুগন্ধি না ছড়ায়।

প্রশ্নঃ রোযা রেখে স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গ হওয়ার হুকুম কি?
উঃ- রোযা অবস্থায় স্বামী এবং স্ত্রীর কথাবার্তার মাধ্যমে অন্তরঙ্গ হতে দোষের কিছু নেই। তবে শর্ত হলো তারা বীর্যপাত করা থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করা। এবং এমন অন্তরঙ্গমুক্ত যাওয়া যাবেনা যার কারণে উত্তেজিত হয়ে বীর্যপাত হয় ।