বিজ্ঞাপন স্থান

যেসব লক্ষণে বুঝবেন স্তন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা কি ?

সম্প্রতিক সময়ে স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেড়ে গেছে। উশৃংখল জীবন যাপন,অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, খাদ্যে ভেজাল, বংশীয় ধারাবাহিকতা, ইত্যাদি কারণে স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে,বিশেষ করে যখন ক্যান্সারের উপসর্গ দেখা দেয় তখন চিকিৎসায় অবহেলার কারণে ক্যান্সার জটিল আকার ধারণ করে। স্তন ক্যান্সার একটি ঘাতক ব্যাধি। প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে খুব দ্রুত চিকিৎসা নিলে স্তন ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব । চলুন আজকের আর্টিকেলে আমরা বেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ গুলি এবং কিভাবে স্তন ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করব। পাশাপাশি  চিকিৎসা ও ঔষধ সম্পর্কে আলোচনা করব।
 

 স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গ কি? 

প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সারের বেশ কয়েকটি লক্ষণ দেখা দেয় এই লক্ষণ গুলো ক্যান্সারের লক্ষণ না হলেও এর কোন একটি আপনার স্তনে দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুতই ডাক্তারের নিন। নয়তোবা এই লক্ষণগুলো থেকে এক সময় ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে । চলুন জেনে নেই সেই লক্ষণ গুলো কি কি
  •  স্তনের কোন অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া অর্থাৎ স্থানের কোন অংশে মাংসপিণ্ড জমাট হয়ে যাওয়া। 
  • স্তন ক্যান্সারের আরেকটি উপসর্গ হলো স্তনের আকার পরিবর্তন হওয়া অর্থাৎ ছোট বড় হয়ে যাওয়া। 
  • স্তনবৃন্তের আকারে ছোট বড় হয়ে যাওয়া। 
  • স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ বের হওয়া। 
  • স্তনের চারপাশের মাংসপিণ্ড ব্যথা অনুভব ও শক্ত হয়ে যাওয়া। 
  • স্তনের ত্বক অস্বাভাবিক কুঁচকে যাওয়া । 
  • স্তনের ভেতরে মাংসপিণ্ড শক্ত হয়ে যাওয়া এবং চাকা অনুভব করা । 
  • স্তনের বোঁটা বা ত্বক লালচে এবং শুষ্ক হয়ে যাওয়া।

 স্তনে ক্যান্সার হওয়ার পর কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?

 প্রাথমিক স্তন ক্যান্সারে উপসর্গ গুলোতে ক্যান্সারের নাও হতে পারে । স্তন ক্যান্সার হওয়ার আগে এবং পরে যে উপসর্গ গুলো দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য গুলো নেই । এজন্য স্তনের যে কোন অপসর্গে দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। এবার চলুন জেনে নেই, স্তন ক্যান্সার হওয়ার পরে যে লক্ষণ গুলো দেখা দেয়।
  • একটি স্তন থেকে অন্য একটি স্তন আকার আকৃতিতে ভিন্নতা দেখানো । 
  • স্তনর চামড়ার রং পরিবর্তন হয়ে যাওয়া। 
  • স্তনের যেকোনো একটি পাশে কোন একটি পিন্ড দেখা দেওয়া এবং সেটা ক্রমাগত থাকা বৃদ্ধি পাওয়া। 
  • ত্বকে একটি "কমলার খোসা" টেক্সচার দেখা দেওয়া। 
  • আহারে অস্বাভাবিক ক্ষুধা অনুভব করা। 
  • শরীরে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া অস্বাভাবিকভাবে । 
  • বগলে বর্ধিত লিম্ফ নোড । 
  • স্তনের চামড়ায় শিরা গুলো স্পষ্ট অনুভব করা। 

স্তন ক্যান্সারের কারণ কি ? 

  • অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন এবং অনিয়ন্ত্রিত খাবার। 
  • পরিবারের কারো স্তন ক্যান্সার থকার ইতিহাস থকলে
  • অপ্রাপ্ত বয়সে ঋতুস্রাব হলে ঋতুস্রাব হওয়ার পর দেরিতে ঋতুস্রাব বন্ধ হলে। 
  • অতিরিক্ত বড় স্তনের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • দেরিতে সন্তান গ্রহণ করা। 
  • সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো।
  • দীর্ঘদিন ধরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ফিল সেবন করলে।
  • একই সঙ্গে বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়ে।
 প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত হলে, চিকিৎসার মাধ্যমে স্তন ক্যান্সার ১০০ ভাগ নিরাময়যোগ্য।

 একটি "স্বাভাবিক" স্তন কি? 

 স্বাভাবিক স্তন বলতে আমরা বুঝি যেটা প্রাকৃতিক .অর্থাৎ জন্মগত আকার, আকৃতি বা বৈশিষ্ট্য. কৃত্রিমতা কখনো স্বাভাবিকের মতো হতে পারে না ।স্বাভাবিকের বৈশিষ্ট্য আলাদা সেটা সবার কাছে প্রিয়। তেমনিভাবে স্বাভাবিক স্তন যতটা সুন্দর দেখায় , স্তনে কোন সমস্যা হলে অর্থাৎ ফুলে যাওয়া, চামড়া কুঁচকে যাওয়া, স্তনের রং পরিবর্তন হলে আর ভালো দেখা যায় না। এ বিষয়টি লক্ষ্যনীয় যে ধৃতস্রাবের সময় স্তনের পরিবর্তন একটি অসহ্যের কারণ বিশেষ করে স্থান যখন ফুলে যায় ব্যথা করে তখন অতিরিক্ত স্রাব হয় তাই পিরিয়ডের শুরু হওয়ার পরে এই লক্ষণগুলো অবশ্য সমাধান করা উচিত।

 নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা 

 নিয়মিত আপনি আপনার স্তনগুলো পরীক্ষা করতে পারেন।আপনার স্তনের আকার-আকৃতি এবং এর পরিবর্তনের উপর নজর রাখুন। স্তনের আকার আকৃতি কেমন স্তনের রং কেমন এগুলো দেখতে পারেন যাতে কোন আক্রান্ত বা কোন উপসর্গে দেখা দিলে আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার স্তনে পরিবর্তন আসতেছে যে বিষয়গুলো আপনি দেখতে পারেন- আপনার স্তনের সামগ্রিক আকার. আকৃতি রঙের পার্থক্য অনুভব করা। 
  •  স্তনের চামড়া ফুলা ও কুঁচকে যাওয়া। 
  •  স্তনে লালচে রং এবং ব্যথা অনুভব করা। 

 স্তনে পিন্ড হওয়া মানেই কি ক্যান্সার? 

 যদিও স্তনে ক্যান্সার হওয়ার সাথে পিণ্ডের একটা সম্পর্ক রয়েছে ,তবুও অনেক সময় স্তনে পিণ্ড হওয়া মানেই ক্যান্সার হওয়া নয় ।কিছু কিছু পিণ্ড স্বাভাবিকভাবে হয়ে থাকে এবং এটা স্বাভাবিক চিকিৎসার মাধ্যমে দূরকরা যায়। আর কিছু কিছু পিণ্ড ক্যান্সারের উপসর্গ হিসেবে আবির্ভূত হয় , তবে ভয় পাবার কিছু নেই, বেশিরভাগ পিণ্ড ক্যান্সারযুক্ত নয়। এরপরও স্তনে পিণ্ড দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে নয়তো স্বাভাবিক পিণ্ড থেকে অবহেলার কারণে স্তন ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে। স্তনের পিণ্ডের সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে: 
  •  স্তন সংক্রমণ 
  • ফাইব্রোসিস্টিক স্তন রোগ ("গলিত স্তন")
  •  ফাইব্রোডেনোমা (ননক্যান্সারাস টিউমার) 
  • ফ্যাট নেক্রোসিস (ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু) 

স্তনে ব্যথা এবং কোমলতার অন্যান্য কারণ

মেয়েরা যখন তাদের স্তনে ব্যথা বা কোমলতা অনুভব করে তখন তারা চিন্তা করে যে তাদের ক্যান্সার হয়েছে অর্থাৎ আসলে এটা ভুল ধারণা সব ব্যথার কারণেই স্তন ক্যান্সার হয়না, কিছু কিছু ব্যাথা স্বাভাবিক কারণ হয়ে থাকে অর্থাৎ আপনার শারীরিক গঠনের উপর ,শারীরিক পরিবর্তনের উপর কিংবা ঋতুস্রাবের ফলে, অধিক পরিমাণ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করা, এমন ব্রা যেটা স্তনের সাথে মানায় না কিন্তু সেটা পরিধান করা,ইত্যাদি. কিন্তু মনে রাখতে হবে স্তনের ব্যথা মানেই ক্যান্সারের লক্ষণ নয় । 

স্তন ক্যান্সারের প্রকারভেদ 

 Infiltrating (invasive) ductal carcinoma - এই ক্যান্সার স্তন বৃন্তে হয়ে থাকে এবং এটা খুবই সাধারণ ক্যান্সার নারীর গাত্র ভেদ করে এ ক্যান্সার ধীরে ধীরে স্তনের বিভিন্ন অংশের ছড়িয়ে পড়ে ।
Ductal carcinoma in situ - এটাকে ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে বলা হয় এ অবস্থায় চিকিৎসা করার ক্যান্সার সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় অবশ্য এর জন্য সঠিকভাবেরোগটি নির্ণয় করা জরুরী, তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় Ductal carcinoma in situ দূর করা যায় ।
Infiltrating (invasive) lobular carcinoma - এই ক্যান্সারের এর উৎপত্তি স্তনের দুগ্ধ উৎপাদক কোষ (lobules) গুলি তে হয়ে থাকে. স্তন ক্যান্সারের ১০ থেকে ১৫% এ প্রকারের হয়ে থাকে ।
Lobular carcinoma in situ - এটি স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়. এ অবস্থা থেকে ম্যালিগন্যান্ট ক্যান্সারে পরিবর্তন হওয়া সম্ভাবনা থাকে ,তাই সঠিক চিকিৎসা করালে করালে খুব সহজেই Lobular carcinoma in situ ক্যান্সার টি দূর করা যায়।
 Triple negative breast cancer - এটি একটি দুরহক স্তন ক্যান্সার. স্তন ক্যান্সারের প্রায় 15 থেকে 20% ক্যান্সার এই প্রকার হয়ে থাকে তাই এর প্রাথমিক পর্যায় থাকা অবস্থায় এর সঠিক রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করাতে হবে।

 স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা কি?

আধুনিক কালে ক্যান্সার নিরাময়ে বেশ কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিষ্কার হয়েছে. তেমনিভাবে স্তন ক্যান্সার ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে বেশ অগ্রগতি হয়েছে । স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার আপনার ক্যান্সারের ধরন, ক্যান্সারের পর্যায়, আকার, ক্যান্সারে কোষগুলি পর্যবেক্ষণ করে হরমোন সংবেদনশীল হলে নির্দিষ্ট একটি চিকিৎসার মূল্যায়ন করবেন । বেশিরভাগ ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলার অস্ত্রোপচার করা হয় । এতে অধিকাংশ মহিলার স্তন ক্যান্সার দূর হয়ে যায় । অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্তন ক্যান্সার দূর না করা যায় তাহলে কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি, বা রেডিয়েশন দিয়ে থাকেন। অনেকের ক্ষেত্রে ভিন্নতা হতে পারে, অস্ত্রোপচারের আগে অনেকেরে কেমোথেরাপি দেওয়া হয় এটা রোগের পর্যায় এবং উপসর্গ নির্ণয় করে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়।

 স্তন ক্যান্সারের অস্ত্রোপচার পদ্ধতি:

লুমপেক্টমি(lumpectomy) : লুমপেক্টমি মূলত একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি যা স্তন এলাকা থেকে পিণ্ড বা ক্যান্সারযুক্ত টিস্যু অপসারণ করতে ব্যবহৃত হয়।এই সার্জারিতে শুধুমাত্র ক্যান্সারযুক্ত টিস্যুর কিছু অংশ অপসারণ করা হয় । যদি বায়োপসিতে দেখায় যে আপনার ক্যান্সার আছে এবং ক্যান্সারটি ছোট এবং প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে তাহলে ডাক্তার আপনাকে এই সার্জারি করতে পরামর্শ দেবেন।

 কাদের লুমপেক্টমি সার্জারি প্রয়োজন?
  • ক্যান্সারটি যখন প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে 
  • সৌম্য টিউমার
  • স্ক্লেরোডার্মার ইতিহাস থকলে।
  •  সিস্টেমিক লুপাস erythematosus ইতিহাস থাকলে।

 লুমপেক্টমি সঙ্গে যুক্ত ঝুঁকি কি কি? 

প্রতিটি অস্ত্র পাচারে কোন না কোন সাইট এফেক্ট থাকে তেমনিভাবে lumpectomy কিছু সাইড ইফেক্ট আছে। 
  • তীব্র ব্যথা।
  •  রক্ত জমাট।
  •  অস্ত্রোপচার চলাকালীন অত্যধিক রক্তপাত স্তনের আকারে পরিবর্তন অর্থাৎ বড় ছোট হয়ে যাওয়া।
  •  স্তনের কিছু অংশ ফুলে যেতে পারে ।
  • বাহু এবং হাত অঞ্চলে লিম্ফ নোডের প্রদাহ।

 কেমোথেরাপি: 

ক্যান্সারের কোষগুলো পুনরায় ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ডাক্তার আপনার ক্যান্সারের কোষ কে অপসারণ করার জন্য সাইটোটক্সিক কেমোথেরাপির ওষুধ দিতে পারেন ইমিউনোথেরাপি: ইমিউনোথেরাপি ক্যান্সার চিকিৎসা করার একটি পদ্ধতি ।এই চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো সাধারণ কোষ কে রোগ প্রতিরোধিক করে গড়ে তোলা অর্থাৎ আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যবস্থা যা ক্যানসারকে ঠিক করতে না পারলেও ক্যান্সারের কোষ গুলোকে রোধ করতে সাহায্য করে।