বিজ্ঞাপন স্থান

মাথাব্যথা নাকি মাইগ্রেন কীভাবে বুঝবেন ? মাইগ্রেনের চিকিৎসা কিভাবে নেবেন ?

মাইগ্রেন কী ? 

মাইগ্রেনের চিকিৎষা কিভাবে নেবেন?


মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের সমস্যায় পড়েনি এমন মানুষ খুবই দুষ্কর। অনেকেই মাঝে মধ্যে মাথা ব্যথা অনুভব করেন। মাথা ব্যথা বিভিন্ন রকম হতে পারে এবং এর কারণও ভিন্ন। কখনো কখনো মাথার একপাশে কখনো কখনো পুরো মাথাজুড়ে ব্যথা হতে পারে। মাঝে মাঝে মাথার বাম পাশে কিংবা মাথার পিছন দিকটায় ব্যথা করতে পারে। মাথা ব্যথার একটা বড় কারণ হলো মাইগ্রেন। মাইগ্রেনের ব্যথা স্বাভাবিক মাথা ব্যাথার চেয়ে একটু আলাদা, স্বাভাবিক মাথা ব্যথা একটু বিশ্রাম নিলে অনেক সময় দূর হয়ে যায়। কিন্তু মাইগ্রেনের ব্যথার ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে । এর মাইগ্রেন হলো মাথার একপাশে কম্পন দিয়ে মাঝারি বা তীব্র ধরনের ব্যথা। কখনো কখনো এই ব্যথা মাথার একপাশে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ওই পাশের পুরো স্থান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আবার মাইগ্রেনের সমস্যায় কখনো কখনো ব্যাথার সঙ্গে দৃষ্টি বিভ্রম বা বমি বমি ভাবও থাকতে পারে।

মাথাব্যথা নাকি মাইগ্রেন কীভাবে বুঝবেন?

 আমাদের অনেকেরই বিভিন্ন সময় মাথা ব্যথা হয়ে থাকে , এর কারণ একটাই বিভিন্ন কাজের চাপে কিংবা কোন কিছু নিয়ে যখন আমরা বেশি চিন্তা করি তখন আমাদের মাথার মধ্যে চাপ পড়ে যেটা একসময় ব্যথায় রূপান্তরিত হয় . এটা স্বাভাবিক এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তার কোন কারণ নেই, কিছুক্ষণ বিশ্রাম করলে বা আরাম করলে এই ব্যথা কমে যায়. অন্যদিকে মাইগ্রেন হলো এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। এ ব্যথা মাথার যে কোনো একপাশ থেকে শুরু হয়। তীব্র ব্যথা ও যন্ত্রণা শুরু হয় এবং আস্তে আস্তে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে । এতে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। যার ফলে অস্থিরতা অনুভব হয়,এসময় কোন কাজে মন বসেনা। এটা স্বাভাবিক মাথা ব্যাথা নয়, তাই মাইগ্রেন শুরু হলে দূত চিকিৎষা জরুরী। আসুন আসুন জেনে নেই কোনটা মাথাব্যথা এবং কোনটা মাইগ্রেন দুটো এক হলেও এর চিকিৎসা ব্যবস্থা আলাদা ।

মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেন, দুটিই একটি সমস্যার ফলাফল। মাথায় যন্ত্রণা।পেইন বা যন্ত্রণা হলো শরীরের একটি প্রতিক্রিয়া। আমাদের শরীরের কোথাও আঘাত পেলে কিংবা রাসায়নিক কোনো বিক্রিয়া ঘটলে, সেই আঘাত বা বিক্রিয়া আমাদের মস্তিষ্কে একটি সিগন্যাল দেয়, এ সিগন্যালটি মস্তিষ্ক যেভাবে অনুভব করে, সেটাই পেইন বা যন্ত্রণা। 

 মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের পার্থক্য  : 

  • শুধু মাথাব্যথায় কেবল মাথার যন্ত্রণা করে, কিন্তু মাইগ্রেনে মাথার যন্ত্রণার সঙ্গে শরীরে আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। 
  •  মাইগ্রেনের ব্যথা হলে মাথার এক পাশ থেকে শুরু হয় যা ধীরে ধীরে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে. 
  •  মাথা ব্যথা হলে পুরো মাথায় একসাথে ব্যাথা শুরু হয় ।
  • স্বাভাবিক মাথাব্যথার চেয়ে মাইগ্রেনের মাথাব্যথা অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক।
  • স্বাভাবিক মাথা ব্যাথা শুধু মাথা ব্যাথা করে আর মাইগ্রেনের ব্যথা হলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যথা অনুভব হয় ,যেমন ঘাড়, কান, নাক, গলা, ইত্যাদি ।
  • মাইগ্রেন হলো মস্তিষ্কের এক ধরনের নিউরোলজিক্যাল পেইন শুধু মাথাব্যথা হলে যে কোনো পেইন কিলার সহজে কাজ করে। কিন্তু মাইগ্রেন হলে স্পেসিফিক পেইন কিলার ভালো কাজ করে, 

 উপসর্গ অনুযায়ী মাইগ্রেনের মধ্যে কয়েকটি প্রকার আছে। প্রাথমিকভাবে মাইগ্রেন হলে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে বাসায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায় প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট যদি আপনার মাইগ্রেনের ব্যথা উপশম না কমায় তাহলে আপনি আপনি একজন নিউরোলজিস্ট এর কাছে গিয়ে পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে পারেন।
 প্রাথমিক ট্রিটমেন্টে মাইগ্রেনের সমস্যা সমাধান না হলে দীর্ঘস্থায় ট্রিটমেন্ট নেওয়া উচিত. মাসে চার বারের বেশি মাইগ্রেন হলে এবং শরীরে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে, অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

দীর্ঘস্থায়ী মাইগ্রেনের জন্য প্রতিরোধমূলক চিকিৎসাঃ

উপরোক্ত চিকিৎসায় যদি মাইগ্রেনের সমস্যা সমাধান না হয় প্রাথমিক অবস্থায় তাহলে দীর্ঘস্থায়ী ট্রিটমেন্ট নেওয়া যেতে পারে বিশেষ করে মাসে এক মাসে চারবারের অধিক মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিলে এটা শারীরিকভাবে সাইট ক্ষতি করতে পারে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গনে ক্ষতি করতে পারে তাই যত দ্রুত সম্ভব চারবারের অধিক বেশি মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর জন্য নিচের কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে- 
  • বিটা-ব্লকার অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস (অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টগুলি হতাশা এবং উদ্বেগের লক্ষণগুলি থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে।) 
  • অ্যান্টিকনভালসেন্টস 
  • অ্যান্টি-সিজিআরপি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ওনাবোটুলিনামটক্সিন এ (ইনজেকশন থেরাপি: দীর্ঘস্থায়ী মাইগ্রেনে বিশেষ কার্যকর) 
  • বোটক্স (ননসার্জিক্যাল ব্রো ট্রিটমেন্ট যা মাইগ্রেনের ব্যথা কমায়) 

মনে রাখতে হবে, এসব ট্রিটমেন্টের বা ঔষধের কার্যকরী ফল পেতে  এক থেকে দেড় মাস সময় লাগতে পারে, অনেকের ক্ষেত্রে এর বেশিও লাগতে পারে । এটা আপনার শরীরের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। ডাক্তার আপনাকে এক বছর পর্যন্ত প্রতিরোধমূলক ওষুধ সেবন করতে পরামর্শ দিতে পারেন।

দীর্ঘ পর্যবেক্ষনের পর,ডাক্তার আপনার মাইগ্রেনের সঠিক ডোজ নির্বাচন করবেন। স্থায়ী মাইগ্রেনের সম্পূর্ণ চিকিৎসা প্রেসক্রিপশনে ওষুধ খেয়ে শুধু মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করা সম্ভব নয় এজন্য প্রাত্যহিক জীবনের কিছু প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করে মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করা সম্ভব, যেমন পর্যাপ্ত ঘুম, শারীরিক ব্যায়াম, দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা, খাদ্য তালিকায় এমন খাবার রাখা উচিত নয় যেটা মাইগ্রেনের ব্যথা বৃদ্ধি করতে পারে ,ক্যাফেইন সীমিত করা, এগুলো মেনে চললে মাইগ্রেনের উপসর্গ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন 

  • যদি ঘন ঘন বা তীব্রভাবে মাথাব্যথা হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
  • তীব্র মাথাব্যথার সঙ্গে যদি বমি বমি ভাব হলে ।
  • এক-দেড় মাসের মধ্যে ৫ কিংবা ৬ বার মাইক্রেনের সমস্যা দেখা দিলে।
  •  শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করলে এবং শরীর যে কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশ মনে হলে।
  •  কথা বলার সময় কথায় জড়তা সৃষ্টি হলে ।
  •  এমন জ্বর বা মাথা ব্যথা যা আগে কখনো আপনার হয়নি সেক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
 
 উপসংহার; মাথা ব্যথার একটা স্বাভাবিক বিষয় কিন্তু মাইগ্রেন স্বাভাবিক বিষয় নয় মাইগ্রেনের ফলে শরীরে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রিয়া হতে পারে তাই মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলে অবশ্যই প্রাথমিক উপায়ে ঘরোয়া পরিবেশে সেই ব্যথাকে লাঘব করুন। যেমন ,স্বাভাবিক চিন্তা চেতনা করা, দুশ্চিন্তা না করা ,অধিক আলোতে না যাওয়া , এমন দৃশ্য এবং ভিডিও না দেখা যেটাতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়. নিয়মিত ঘুমানো. খাদ্যাভাসে অ্যালকোহল জাতীয় জিনিস পরিহার করা।
আপনার বন্ধুদের মাঝে আর্টিকেলটি শেয়ার করুন, যাতে তারা মাইগ্রেনের বিষয় জানতে পারে।