বিজ্ঞাপন স্থান

স্তন ক্যান্সার কি বংশগত?

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে স্তন ক্যান্সার কি বংশগত? অর্থাৎ বংশের মধ্যে কারো যদি স্তন ক্যান্সার থাকে তাহলে কি স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে? এর উত্তর হচ্ছে,হ্যাঁ। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি অনুসারে প্রায় ১২% স্তন ক্যান্সার বংশগতভাবে হয়ে থাকে । তার মানে ,বংশগতভাবে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই আর্টিকেলে স্তন ক্যান্সারের জন্য জেনেটিক এবং বংশগত ঝুঁকির কারণগুলি আলোচনা করা হবে। এবং কারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে সে বিষয়েও আলোচনা করা হবে।

বংশগত স্তন ক্যান্সার কি? 

বংশগত স্তন ক্যান্সার হল স্তন ক্যান্সার যা জেনেটিক মিউটেশন দ্বারা সৃষ্ট হয় যা পরিবারের মধ্য দিয়ে চলে যায়। মানে ধ্বংসের কারণ স্তন ক্যান্সার থাকলে তার পরবর্তী প্রজন্মে যে কারো স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,এক গবেষণায় দেখা গেছে স্তন ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ১২ থেকে ১৩% বংশগত কারণ হয়ে থাকে। বংশগত স্তন ক্যান্সারের সাথে যুক্ত সবচেয়ে সাধারণ জিন হল BRCA1 এবং BRCA2। যাইহোক, যেসব মহিলারা এই জেনেটিক মিউটেশনগুলি বহন করেন ,তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। BRCA1 এবং BRCA2 মিউটেশনগুলি স্তন ক্যান্সারে যেসব ঝুঁকি বাড়ায়:
  • এই (BRCA1 এবং BRCA2 ) মিউটেশন জিনের ফলে অল্প বয়সে স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। 
  • উভয় স্তনে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে অর্থাৎ ডান পাশ এবং বাম পাশের স্তনে মিউটেশন জিনের প্রভাবে স্তন ক্যান্সার হতে পারে ।
  •  ডিম্বাশয় এবং অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার সহ অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। 
  • পরিবারের কারো BRCA1 এবং BRCA2 জীনগুলো থাকলে, স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৫০%। 

 বংশগত স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে কারা? 

পরিবার ইতিহাসে যদি কারো স্তন ক্যান্সার থাকে তাহলে স্তন ক্যান্সার হবে বিষয়টা এমন নয়। তবে স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায় ।পরিবারের কোন সদস্যের স্তন ক্যান্সার থাকলে কারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে চলুন জেনে নেই।
  • পরিবারের এমন ঘনিষ্ঠ সদস্য যাদের সাথে আপনি সবসময় চলাফেরা করেন।
  • যাদের স্তন বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হয়েছে। 
  • একই পরিবারের একাধিক সদস্যের স্তন বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হয়েছে  এমন পরিবারের অন্য সদস্যদের ক্যান্সার হওয়া ঝুঁকি থাকে। 
  • পরিবারের সদস্য যারা অল্প বয়সে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিল । 

 বংশগত জিনের সাথে অন্য কোন জিনিস সম্পর্ক আছে? 

বংশগত স্তন ক্যান্সার অন্য কোন জিনের মিউটেশনের ফলেও হতে পারে । যদিও এ জেলগুলো স্তন ক্যান্সারের সাধারণ উৎস হিসেবে গণনা করা হয় তবে কিছু মিনিটশন জেনেটিক সিন্ড্রোম স্তন ক্যান্সার এবং অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। মানে, বংশগত কোন সদস্যের যেকোনো ক্যান্সারের জিন থাকলে সেখান থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আর সেটা হতে পারে স্তন ক্যান্সার কিংবা অন্যান্য ক্যান্সার। কিছু জিন মিউটেশন স্তন ক্যান্সার এবং অন্যান্য ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এই মিউটেশনগুলির মধ্যে রয়েছে: 
  • TP53, যা Li-Fraumeni সিন্ড্রোম সৃষ্টি করে। পাশাপাশি,এটি কোষকে খুব দ্রুত বা অনিয়ন্ত্রিত উপায়ে বৃদ্ধি এবং বিভাজন (প্রসারিত হওয়া) থেকে রক্ষা করে ।
  • PTEN, এই জিনটি এনজাইম তৈরি করে যা শরীরের প্রায় সব টিস্যুতে পাওয়া যায়। 
  • STK11, যা Peutz-Jeghers সিন্ড্রোম হতে পারে

স্তন ক্যান্সারের জন্য অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলি কী কী?


স্তন ক্যান্সারের একক কোনো কারণ নেই, বিভিন্ন কারণে স্তন ক্যান্সার হতে পারে । বংশগত কারণ ছাড়াও তখন ক্যান্সারের আরো অনেকগুলো কারণ রয়েছে যেমনঃ
  •  অধিক বয়সঃ এক গবেষণায় দেখা গেছে স্তন ক্যান্সারে রোগীদের মধ্যে ৪৫ পার্সেন্ট রোগীর বয়স ৫০ এর বেশি, সুতরাং বলা যায় পঞ্চাশোর্ধ মহিলাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার যুক্তি সবচেয়ে বেশি থাকে পারিবারিক ইতিহাসঃ স্তন ক্যান্সারের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো পারিবারিক ইতিহাস। রক্তের সম্পর্কের,একই পরিবারের কোনো সদস্যের ক্যান্সার থাকলে অন্য সদস্যের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  •  স্থুলতা বা শারীরিকভাবে স্বাস্থ্যবানঃ যে সমস্ত মহিলারা শারীরিকভাবে একটু স্বাস্থ্যবান। শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি থাকে, তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়া ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। 
  • ঘন স্তনের টিস্যুঃ ঘন স্তনযুক্ত মহিলাদের কম চর্বিযুক্ত টিস্যু এবং বেশি গ্রন্থিযুক্ত টিস্যু থাকে যা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। 
  •  অল্প বয়সে আপনার পিরিয়ড শুরু করাঃ 12 বছরের আগে পিরিয়ড শুরু হলে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • দেরিতে সন্তান নেওয়াঃ যে সমস্ত নারীরা দেরিতে সন্তান নেয়, বিশেষ করে ৩০ বছরের পরে সন্তান নেয়, সে সমস্ত নারীদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। স্তন্যপান না করানোঃ স্তন ক্যান্সার হওয়ার আরেকটি ঝুঁকি হলো বাচ্চাকে দুধ পান না করানো। অনেক নারী আছে যারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ায় না , সে সমস্ত নারীদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে

বংশগত স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কিভাবে কমানো যায়?

যদিও স্তন ক্যান্সারের বংশগত কারণ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকে তারপরও কিছু নিয়ম মেনে চললে বংশগত স্তন ক্যান্সার এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব এজন্য পারিবারিক ইতিহাসে যদি কারো স্থান বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার থাকে তাহলে আপনি নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গুলো নিতে পারেন
 ১। পারিবারিক ডিম্বাশয়ের ইতিহাস জানাঃ পারিবারিক ডিম্বাশয় ও  ক্যান্সারের ব্যাপারে ডাক্তারের সাথে সরাসরি কথা বলুন এবং জেনেটিক জিন পরীক্ষা আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা সেটার ব্যাপারে পরামর্শ নিন।
২। নিয়মিতস্তন ক্যান্সার স্ক্রীনিং করুনঃ স্তন ক্যান্সারা ঝুঁকিতে থাকে বা যেসব মহিলা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা নিয়মিত মমোগ্রাম এবং স্তন পরীক্ষা করা উচিত। যাদের প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যান্সার সনাক্ত করা যায় তা প্রাথমিক অবস্থায় স্থানান্তর সনাক্ত করে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা এটা দূর করা যায়
৩। ঝুঁকি-হ্রাসকারী সার্জারি বিবেচনা করুনঃ যেকোনো সার্জারি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর তারপরও রোগের ঠাই ভোট দিতে অবস্থাকে কমানোর জন্য ডাক্তাররা সার্জারির পরামর্শ দেয়,যেসব মহিলার BRCA1 বা BRCA2 মিউটেশন আছে তারা তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমাতে প্রফিল্যাকটিক সার্জারি করা বেছে নিতে পারেন।
৪। পারিবারিক জেনেটিক জিন পরীক্ষা করাঃ বংশগত স্তন ক্যান্সার ঝুঁকি বুঝতে, পরিবারের  স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস  পর্যালোচনা এবং পরিবারের সদস্যদের জিন পরীক্ষা করাতে পারেন। পূর্বেই এ সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। তাহলেই বংশগত স্তন ক্যান্সার এড়ানো সম্ভব ।